সিলেট-৫: বিএনপি জোটের প্রার্থী ওবায়দুল্লাহ ফারুক, বিদ্রোহী হলেন ‘চাকসু মামুন’—তৃণমূলে চরম ক্ষোভ!

Daily Daily

Zakiganj

প্রকাশিত: ৮:৪০ অপরাহ্ণ, ডিসেম্বর ২৩, ২০২৫

স্টাফ রিপোর্টার, ডেইলি জকিগঞ্জ:

আসন্ন ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সিলেট০৫ (জকিগঞ্জকানাইঘাট) আসনে নাটকীয় মোড় নিয়েছে রাজনৈতিক সমীকরণ। দীর্ঘ প্রতীক্ষার পর এই আসনে বিএনপি নেতৃত্বাধীন জোটের মনোনয়ন পেয়েছেন জমিয়তে উলামায়ে ইসলামের কেন্দ্রীয় সভাপতি মাওলানা ওবায়দুল্লাহ ফারুক। তবে কেন্দ্রের এই সিদ্ধান্ত মেনে নেননি স্থানীয় বিএনপির হেভিওয়েট নেতা জেলা বিএনপির সহসভাপতি মামুনুর রশীদ (চাকসু মামুন) তিনি স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনে লড়ার ঘোষণা দিয়েছেন।

আজ ২৩ ডিসেম্বর (মঙ্গলবার) বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এক সংবাদসম্মেলনে জোটের শরিকদের মধ্যে আসন বন্টন প্রার্থীদের নাম ঘোষণা করেন, যেখানে সিলেট০৫ আসনে ওবায়দুল্লাহ ফারুকের নাম চূড়ান্ত করা হয়।

জোটের প্রার্থী ঘোষণার পরপরই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে নিজের অবস্থান পরিষ্কার করেন সাবেক ছাত্রনেতা মামুনুর রশীদ। এক ফেসবুক পোস্টে তিনি নির্বাচনী লড়াইয়ে থাকার দৃঢ় প্রত্যয় ব্যক্তকরেন। তিনি নিজেকে কোনো নির্দিষ্ট দলের প্রার্থী নয়, বরংজনগণের আস্থার প্রতিনিধিহিসেবেউল্লেখ করেন।

পোস্টে মামুন লিখেন, “দীর্ঘ ৩৫ বছর ধরে আমি আপনাদের সুখদুঃখে সর্বোচ্চটা দিয়ে পাশে থাকারচেষ্টা করেছি। আমাদের এলাকার আরও উন্নয়ন এবং আপনাদের অধিকার আদায়ের লক্ষ্যে আমিআসন্ন ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সিলেট আসনে আপনাদের প্রার্থী হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতাকরার সিদ্ধান্ত নিয়েছি।তিনি আরও বলেন, “দুর্নীতিমুক্ত সমাজ এবং আধুনিক এলাকা গড়ার এইলড়াইয়ে আপনাদের দোয়া সমর্থন আমার একমাত্র পাথেয়।

বিএনপি মহাসচিবের ঘোষণার পর জকিগঞ্জ কানাইঘাট জুড়ে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা দিলেও, স্থানীয় বিএনপি  অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীদের বড় একটি অংশ ক্ষোভে ফেটে পড়েছেন। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে কেউ কেউ দলীয় সিদ্ধান্ত মেনে নেওয়ার কথা বললেও, সিংহভাগ নেতাকর্মী মাওলানা ওবায়দুল্লাহ ফারুককেজনবিচ্ছিন্নসুবিধাবাদীআখ্যা দিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করছেন।

অনেকে ২০১৮ সালের নির্বাচনের তিক্ত অভিজ্ঞতার কথা স্মরণ করে ওবায়দুল্লাহ ফারুককেবিশ্বাসঘাতকহিসেবেও অভিহিত করছেন। বিক্ষুব্ধ কর্মীদের অভিযোগ, ২০১৮ সালের নির্বাচনে ধানেরশীষ প্রতীকে ফারুকের পক্ষে কাজ করতে গিয়ে তারা পুলিশি হয়রানি মামলার শিকার হয়েছিলেন।অনেকেই কারাবরণ করেছেন। অথচ নির্বাচনের দিন সহিংসতা সংঘর্ষের পর ফারুক জোটের শরিকদলের নেতাকর্মীদের কোনো খোঁজ নেননি।

বিএনপি কর্মীদের অনেকে ফেসবুকে তাদের মতামত ব্যক্ত করে বলেন, “নির্বাচনের দিন বিকেল থেকেই তিনি উধাও হয়ে যান। এরপর গত পাঁচ বছরে বন্যা বা কোনো প্রাকৃতিক দুর্যোগেজকিগঞ্জকানাইঘাটবাসী তাকে পাশে পায়নি। তিনি কেবল নির্বাচনের সময়ই এলাকায় আসেন।

আব্দুল আলিম নামে একজন তাকে ‘নির্বাচনী মাওলানা’ হিসেবে সম্বোধন করে ফেসবুকে পোস্ট করেছেন।

স্থানীয় রাজনৈতিক বিশ্লেষক দলের ত্যাগী নেতারা মনে করছেন, ভুল প্রার্থী নির্বাচনের কারণে এই আসনে বিএনপি জোটের ভরাডুবির আশঙ্কা রয়েছে।

বিষয়ে বিএনপি নেতা ও সাবেক পৌরসভা কাউন্সিলর রিপন আহমদ বলেন, “সিলেট আসনটি বিএনপির শক্ত ঘাঁটি। এখানে বারবার জোটের প্রার্থী চাপিয়ে দিয়ে ২৫ বছর থেকে বিএনপির রাজনীতিকে কোণঠাসা করে রাখা হয়েছে। মামুন ভাইকে মনোনয়ন দিলে এই আসনটি সহজেই পুনরুদ্ধার করা সম্ভব হতো। সেখানে একজন জনবিচ্ছিন্ন দুর্বল প্রার্থীকে মনোনয়ন দিয়ে আসনটিকে হুমকির মুখে ফেলে দেওয়া হলো। আমরা এখনো আশাবাদী বিএনপি নেতৃবৃন্দ তাদের সিদ্ধান্তে পরিবর্তন নিয়ে আসবেন। ওবায়দুল্লাহ ফারুক সাহেব ১৮ সালের নির্বাচনের পর আমাদের কোন খোঁজ-খবর রাখেন নি, আমাদেরকে নির্বাচনের মাঠে ফেলে রেখে তিনি চলে যান।”

সব মিলিয়ে, জোটের প্রার্থী ওবায়দুল্লাহ ফারুক এবং বিদ্রোহী প্রার্থী চাকসু মামুনের অন্তর্দন্দে সিলেট আসনের নির্বাচনী মাঠ এখন উত্তপ্ত।

এদিকে দলীয় জোটের প্রার্থীদের দুজনই স্বজন ব্যক্তি হিসেবে পরিচিত। দলীয় প্রার্থী চুড়ান্ত হলেভোটারদের সমর্থন এখন ঐদিকে গড়ানোর সমূহ সম্ভাবনা রয়েছে বলে অনেকেই মনে করছেন।